গত বছরের ১৭ মার্চ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। দেখতে দেখতে ১ বছর পেরিয়ে গেল। শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে ফেরার সুযোগ হয়নি এখনো। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিতভাবে, কেউবা ঢিলেঢালাভাবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে গেছে।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলো মুঠোফোনে। অনলাইন ক্লাসের কারণে পড়াশোনা থেমে নেই বলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি রয়েছে। তবে অনেক শিক্ষার্থীর মতে, হাতে-কলমে অনেক কিছু শেখা যায় না বলে জানার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী প্রতিমা রানী দাস বললেন, ‘ল্যাব বন্ধ থাকায় ব্যবহারিক ক্লাসগুলো করতে পারছি না। এই সেমিস্টারের আলোচ্য বিষয়ে আর্সেনিক নিয়ে পড়াশোনা রয়েছে। কিন্তু পানিতে আর্সেনিক পরীক্ষার পদ্ধতি যদি হাতে-কলমে শিখতে না পারি, তাহলে তো কোনো লাভ নেই।’
অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। তিনি জানালেন, একাধিকবার তাঁদের অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে, কিছুদিন পর আবার তা বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এ রকম হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘সফটওয়্যার ল্যাব ক্লাসগুলো চাইলেই অনলাইনে খুব ভালোভাবে নেওয়া সম্ভব। ইউটিউব, কোর্সেরাসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে সফটওয়্যারভিত্তিক ল্যাব ক্লাসগুলো দেখে তা-ই মনে হয়। কিন্তু আমাদের এই ল্যাব ক্লাসগুলো একরকম দায়সারাভাবে করানো হচ্ছে।’
এদিকে অনলাইনে পড়াশোনার কারণে কিছু বিষয়ে বিস্তারিত জানার সুযোগ পাচ্ছেন না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কাজী নিশাত আনজুম। তিনি বলেন, ‘ক্লাসে পড়ানো কোনো বিষয় বিস্তারিত জানতে চাইলে সেগুলো আমাদের বিভিন্ন বই থেকে পড়তে হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় লাইব্রেরিতে গিয়ে সেসব পড়ার সুযোগ পাচ্ছি না। আবার আমার অনেক বন্ধু বাড়িতে চলে গেছে। ফলে ঢাকার বাইরে দোকান থেকে ওই বইগুলো কিনেও পড়া সম্ভব হচ্ছে না।’
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো বিভাগ গত এক বছরেও অনলাইন ক্লাসে নিয়মিত হতে পারেনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা জানালেন, তাঁদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ মার্চ থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগটির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বিভাগের অন্যান্য বর্ষের ক্লাস হলেও অনলাইনে আমাদের কোনো ক্লাস হয়নি। তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে মাঝপথে পরীক্ষা আটকে গেছে। ফলে এত দিন সেভাবে কোনো পড়াশোনা হয়নি। তবে এখন অনলাইনে ক্লাস শুরু হওয়ায় ভালো লাগছে।’
অনলাইনে নিয়মিত পাঠদানের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। নিয়মিত ক্লাস হওয়ার কারণে পড়াশোনা পুরোদমেই চলছে বলে জানালেন নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএর এক শিক্ষার্থী। তবে ক্লাস-পরীক্ষা অনলাইনে হওয়ার কারণে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। নিজের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘অনলাইন ক্লাস শুরুর পর থেকে আমার সিজিপিএ কমে গেছে। আমাদের কোর্সগুলোতে চূড়ান্ত মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পরীক্ষা ছাড়াও ক্লাসে অংশগ্রহণের ওপর নম্বর থাকে। অনলাইন ক্লাসে আমি উপস্থিত থাকলেও শিক্ষকের সঙ্গে সেভাবে সরাসরি কথা বলার সুযোগ ছিল না। মাইক চালু করে কথা বললেও শিক্ষক অনেক সময় বুঝতে পারেন না, কে কথা বলছে। এতে করে ক্লাসে অংশগ্রহণ করেও নম্বর পাইনি। ফলে সামগ্রিকভাবে আশানুরূপ গ্রেড পাইনি।’
স্বাভাবিকের তুলনায় ক্লাসের সংখ্যা কম হলেও নিয়মিত অনলাইন পাঠদান চলছে বলে স্বস্তি প্রকাশ করলেন সিলেট এমসি কলেজের বাংলা বিভাগের অনার্স চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ ওমর। তিনি বললেন, ‘আমাদের শিক্ষকেরা পাঠ্যক্রম কিছুটা সংক্ষিপ্ত করে পড়াচ্ছেন। এ জন্য সব বিষয়ের পুরোটা হয়তো জানতে পারছি না। তবে নিয়মিত ক্লাস চলছে বলে পড়াশোনা একেবারে থেমে নেই। মহামারির মধ্যে ঠিকমতো পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারাই আমার কাছে ইতিবাচক বিষয়।’





আপনার মতামত দিন