১১ই জুন মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক খেলা দিবস। শিশুদের জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব বাড়িয়ে তাদের শিক্ষার সুযোগ ও মেধা বিকাশের প্রতি জোর দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এবারই প্রথমবারের মতো সারা বিশ্বে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। দিবসটি পালনে সংগঠিত, প্রাতিষ্ঠানিক বা প্রতিযোগিতামূলক কোনো আয়োজন নয়, বরং শিশুদের নিছক আনন্দ দেওয়া এবং তাদের খেলাধুলা করার সুযোগ পাওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
গত ২৫শে মার্চ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৪০টিরও বেশি দেশের সম্মতিতে নতুন একটি দিবস ঘোষণার প্রস্তাব গৃহীত হয়। সেখানেই প্রতিবছর ১১ই জুনকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অব প্লে’ ঘোষণা করা হয় এবং এ বছর প্রথমবারের মতো দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। দিবসটি পালনে কয়েকটি সংস্থাকে নিয়ে গঠিত দি ইন্টারন্যাশনাল ডে অব প্লে (আইওডিপি) জোটের সমন্বয় করছে দি লেগো ফাউন্ডেশন। বাংলাদেশ থেকে ব্র্যাক এই জোটের সঙ্গে রয়েছে। ‘খেলা ভালো’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আইডিওপি-এর ‘দি পাওয়ার অব প্লে’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি ৩ জনের একজন শিশু খেলার জন্য যথেষ্ট সময় পায় না। প্রতি ৫ জনের একজনের খেলার নিরাপদ জায়গা নেই। প্রতিবন্ধী শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতি ৩ জনের একজনের খেলার সঙ্গী নেই। বিশ্ব জুড়ে ১০ হাজারের বেশি শিশুর মতামতের ভিত্তিতে জরিপটি করা হয়েছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ-এর হিসেবে বিশ্বে এখনও বহু শিশু রয়েছে, যাদের কাছে খেলাধুলার জন্য একটু অবসর পাওয়ার বিষয়টি ভাগ্যের ব্যাপার। বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে প্রায় ১৬০ মিলিয়ন শিশু খেলাধুলা বা শিক্ষাগ্রহণের পরিবর্তে জীবিকার জন্য কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।
মিজানুর রহমান নামের এক অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে ছোট দুটি শিশু। ১৩ ও ১০ বছর বয়সী মেয়ে ও ছেলেকে স্কুলের মাঠে ছুটির দিনে খেলার জন্য ভর্তি করেছিলেন। তবে খেলার ফি ১ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১৫ হাজার টাকা হওয়ায় সেটা বন্ধ করে দিয়েছেন। বাসায় লুডু, দাবা, রুবিকস কিউব কিনে দিয়েছেন। কিন্তু এ খেলাগুলো ছেলে–মেয়েদের কাছে খুব সাদামাটা লাগে। এর চেয়ে তারা মুঠোফোন, ট্যাব, কম্পিউটারে ভার্চ্যুয়াল খেলায় অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ও আনন্দ পায়। পড়ালেখার পর যতটুকু ফুরসত পায়, তারা গেজেটেই ডুবে থাকে।

আইডপের জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারও খেলার সময় নেই। কারও খেলার অনুমতি নেই। কারও খেলাধুলা করার মতো অবকাঠামো নেই। এশিয়ার ২০ শতাংশ শিশুর খেলার অনুমতি নেই। আমেরিকা ও ইউরোপে এ হার ১০ শতাংশ এবং আফ্রিকায় ২৮ শতাংশ। শিশুদের খেলতে চাওয়ার আগ্রহ কতটা এবং শিশুমনে খেলার প্রভাব কতটা সেটাও উঠে এসেছে এই জরিপে। ৯৭ শতাংশ শিশু জানিয়েছে, খেলা তাদের জন্য জরুরি। ৭১ শতাংশ জানিয়েছে, খেলা তাদের আনন্দ দেয়। ৫৭ শতাংশ মনে করে, খেলার মাধ্যমে তাদের বন্ধু তৈরি হয়। ৪৫ শতাংশ জানিয়েছে, খেলার মাধ্যমে মা–বাবা ও পরিবারের সদস্য এবং যিনি তাদের যত্ন নেন (কেয়ারগিভার) তাঁদের সঙ্গে সময় কাটাতে তারা খেলতে ভালোবাসে।
‘খেলা ভালো’ এবং ‘খেলা শুধুই খেলা নয়, খেলতে খেলতে শেখা হয়’ এমন স্লোগান নিয়ে ব্র্যাক দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক ইরাম মরিয়ম প্রথম আলোকে বলেন, শিশুদের বুদ্ধি, ভাষা, শারীরিক, সামাজিক ও আবেগ–সংক্রান্ত বিকাশ এবং সৃজনশীলতা ও সৃষ্টিশীলতা বাড়াতে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। পড়ালেখার চাপ ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে মা–বাবাও ভুলে যান যে সন্তানের জন্য খেলাটা কতটা জরুরি। খোলা জায়গা পাওয়া না গেলে অন্তত ঘরের ভেতর যেকোনো জিনিস দিয়ে, ছড়া গান, গল্প বলা ইত্যাদির মাধ্যমেও যেন শিশুদের খেলার সময় ও সুযোগ দেওয়া হয়, সে জন্য মা–বাবাকে সচেতন হতে হবে। শুধু মুঠোফোনে খেললে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা হয় না।

জরিপের উপাত্ত তুলে ধরে ইরাম মরিয়ম আরও বলেন, দেশীয় জিনিস দিয়ে খেলতে দিলে শিশুরা বেশি একাত্মবোধ করে। মা–বাবারাও নিজেদের শৈশবে ফিরে যান ও শিশুদের সঙ্গে খেলতে উৎসাহ বোধ করেন। শিশুদের শিক্ষা ও খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি খেলাধুলা তাদের জীবনে যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে, তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
আপনার মতামত দিন