সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শ্রুতিকটু নাম বদলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নেতিবাচক এবং শিশুমনে বিরূপ প্রভাব ফেলে এমন নামগুলো সংশোধনে চলতি বছর নীতিমালা প্রণয়ন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের পর নাম বদলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, অনেক বিদ্যালয়ের নাম শ্রুতিকটু, যা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমরা এটার ওপর কাজ করে একটা নীতিমালা ইতিমধ্যে জারি করেছি।
বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যক্তি বা বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে নামকরণ করা যাবে। তবে রাষ্ট্রবিরোধী, ফৌজদারি, দেওয়ানি ও দুর্নীতির অপরাধে অভিযুক্ত বা সাজাপ্রাপ্তদের নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা যাবে না। এ ছাড়া ক্ষেত্র বিশেষে এলাকার নাম অনুসারেও নামকরণ করা যাবে। স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সঙ্গে সামঞ্জস্যতা সাপেক্ষে নাম পরিবর্তন করা যাবে।

সারাদেশে শ্রুতিকটু নামে বহু প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটির নাম জানা গেছে- মাংগীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোদা প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনা পোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাড়া গোদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোমরভাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুকুরমারা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুকুরপোতা প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাক ফাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাথা ভাঙা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, দাঁতভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘোড়ামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছাগল খাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কানার হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাপখাওয়া মাদ্রাসা, নুনখাওয়া বালিকা বিদ্যালয়, মহিষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভেড়ামারা প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাখিমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিয়ালখাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুধ খাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দৌড়ের বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়, হনুমা নু নের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাটিকাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছালাভরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফাঁসিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খেলনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উল্টা ডাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোমা পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাছার বাজার বিদ্যালয়, গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড় ধোন গাছা প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনা কাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধোন কামড়া, ভোদা মারা প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাখাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাড়াদেওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, সারাদেশের এ ধরনের নামে অন্তত দেড়-দুইশ বিদ্যালয় রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের এসব আবোল-তাবোল নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে দুটি কমিটি করে দিয়েছি। কমিটির মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো আসছে। অধিদপ্তরের মাধ্যমে আগামী ছয় মাসের মধ্যে নামগুলো পরিবর্তন করব।’

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সাদা কাগজে যৌক্তিকতা উল্লেখ করে আবেদন অথবা প্রস্তাব করতে হবে। এর সঙ্গে ম্যানেজিং কমিটির সুপারিশ, বর্তমান নামের প্রমাণক হিসেবে পিইএমআইএসে স্কুলের নামের তালিকার সত্যায়িত কপি আবেদনের জন্য জমা দিতে হবে।
আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সভায় নাম পরিবর্তন চূড়ান্ত করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট ডাটাবেজসহ সব প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গেজেট বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বিদ্যালয়ের সংশোধিত নাম অন্তর্ভুক্ত করবে। পরে স্থানীয় সব সরকারি দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানকে তা জানানোর পাশাপাশি এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট সব অফিস আদেশ ও প্রয়োজনীয় তথ্য সব ডাটাবেজে এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংরক্ষণ করা হবে।
আপনার মতামত দিন