দেশের অন্যতম বৃহৎ কাপেড়ের মাকের্ট রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ড। যা প্রায় 6 ঘন্টা পর নিয়ন্ত্রে আছে। ফায়ার সাভির্সের 50টি ইউনিট কাজ করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে তিনটি প্রতিবন্ধকতার কথা বলেছে ফায়ার সার্ভিস। এসব কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগে। দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন আর আগুন ছড়াবে না। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট কাজ করেছে। তবে পুরোপুরি নির্বাপণ করতে আরও কিছু সময় লাগবে। প্রতিটি ভবন ও ঘরে গিয়ে আগুন আছে কি না, তা পরীক্ষা করতে হবে।

ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয় ৪ বছর আগে
আগুনের উৎস সম্পর্কে তদন্তের আগে কিছু জানানো যাবে না বলে জানান মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের ২ এপ্রিল এই ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার টানিয়েছিলাম। ১০ বার নোটিশ দিয়েছি, করণীয় যা যা করেছি। তারপরও ব্যবসা চলছিল।’
এ বিষয়ে অন্য সংস্থার গাফিলতি থাকলে তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি। আগুন নির্বাপণের পর পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ রাজধানীর ফুলবাড়িয়ার বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সকে চার বছর আগেই অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল। তখন ফায়ার সার্ভিস থেকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে বেশ কিছু ব্যানারও টাঙানো হয়েছিল। সবাই জানত এই কমপ্লেক্স বড় ধরনের অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু এরপর সরকারের অন্য কোনো সংস্থা কিংবা বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের দোকানমালিকেরা অগ্নিঝুঁকি প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
গতকাল মঙ্গলবার ভয়াবহ আগুনে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর সরকারের কোনো সংস্থাই এখন আর দায় নিতে চাইছে না।

সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা মার্কেটটি (বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স) যে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’, তা জানিয়ে সংস্থাটিকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়েছে কি না এবং তাদের (করপোরেশন) গাফিলতির কারণেই এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে কি না, এমন প্রশ্নে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। যে সংস্থার নাম উচ্চারণ করেছেন, তাদের জিজ্ঞাসা করেন।’
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবনগুলো ভেঙে নতুন করে অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দোকান মালিক সমিতির নেতাদের বাধার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ টিনের ভবনগুলো ভেঙে নতুন করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সময়ে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সটিকে স্টিলের অবকাঠামো দিয়ে ১০ তলা করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এই কাজ করতে ঠিকাদারকে কার্যাদেশও (ভবন নির্মাণের অনুমতিপত্র) দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দোকান মালিক সমিতির নেতারা উচ্চ আদালতে গিয়ে নির্মাণকাজের স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগের দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে জোর তৎপরতা চালানো হয়নি। নতুন মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের ফাইলে অনুমোদন দিয়েছেন। এই বাইরে আর তেমন কিছুই হয়নি।
সিটি করপোরেশনের একাধিক সূত্র বলছে, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজনৈতিকভাবে প্রভাশালী কিছু ব্যবসায়ী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলের নেতারা মিলেমিশে এই কমপ্লেক্স নিয়ন্ত্রণ করতেন। নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে ব্যবসায়ী নেতাদের আধিপত্য কমে যাবে, তাই তাঁরা সেখানে নতুন করে ভবন নির্মাণ করতে দেননি।
উল্লেখ্য, বঙ্গবাজার মার্কেটে এর আগেও কমপক্ষে তিনবার বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে ১৯৯৫ সালে একবার ভয়াবহ আগুনে পুরো বিপণিবিতান পুড়ে যায়। এ ছাড়া ২০১৮ সালেও একবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়।
আপনার মতামত দিন