দেশের ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই গুচ্ছের অধীনে মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান এ তিনটি বিষয়বস্তুর ওপর পরীক্ষা নেওয়া হবে। এসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা হবে। উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির ওপর ভিত্তি করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে। অর্থাৎ একজন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়েই যোগ্যতা অনুযায়ী ভর্তির সুযোগ পাবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমেই নিজ বিভাগের পাশাপাশি অন্য বিভাগভুক্ত বিষয়েও ভর্তি হওয়া যাবে। সেভাবেই বিষয়ভিত্তিক আসন রাখা হবে।
গতকাল শনিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভা কক্ষে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ১ম বর্ষে শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উপাচার্যবৃন্দের সমন্বয়ের গঠিত কমিটির ১ম সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।
উক্ত সভায় নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়ঃ
- ২০১৯ এবং ২০২০ সালে যারা এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করবেন তারাই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
- ১০০ নম্বরের এই পরীক্ষার প্রশ্ন হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। তিনটি বিভাগের জন্য তিনটি পরীক্ষা হবে।
- এইচএসসি সিলেবাসের ভিত্তিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হবে।
- আবেদন যোগ্যতা হলো – এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফল যোগ করে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য জিপিএ ৬, বাণিজ্য বিভাগের জন্য জিপিএ ৬.৫ ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জিপিএ ৭ থাকতে হবে।
- তবে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ-৩ এর নিচে থাকলে পরীক্ষার জন্য আবেদন করা যাবে না।
- মানবিক বিভাগের পরীক্ষা হবে বাংলা, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। এর মধ্যে বাংলায় ৪০, ইংরেজিতে ৩৫ এবং আইসিটিতে ২৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
- ব্যবসায় শিক্ষায় (বাণিজ্য) হিসাববিজ্ঞান (২৫ নম্বর), ব্যবস্থাপনা (২৫ নম্বর), ভাষা ( ২৫ নম্বরের মধ্যে বাংলায় ১৩ ও ইংরেজিতে ১২ নম্বর) এবং আইসিটি (২৫ নম্বর) বিষয়ে পরীক্ষা হবে।
- বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ভাষা ( ২০ নম্বরের মধ্যে বাংলায় ১০ ও ইংরেজিতে ১০ নম্বর), রসায়ন (২০ নম্বর), পদার্থ (২০ নম্বর) এবং আইসিটি, গণিত ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। এর মধ্যে আইসিটি, গণিত ও জীববিজ্ঞানের মধ্যে যেকোনো দুটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। যার প্রতিটির নম্বর হবে ২০ করে।
- বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক শাখার পরীক্ষার্থীরা নিজ নিজ গ্রুপে পরীক্ষা দিয়েই বিভাগ পরিবর্তন করতে পারবে।
- ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছভুক্ত সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার (২০১৯ ও ২০২০) পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নেবে সেটি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করবে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বহু নির্বাচনী প্রশ্ন বা এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার্থীদের এমসিকিউ পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ক্ষেত্রে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য আলাদাভাবে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম স্কোর ঠিক করতে পারবেন।’ আরো জানান, ‘কোভিড-১৯ এর প্রকোপ কমলে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।’
তাই ভর্তি পরীক্ষা কবে হবে সেটি নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে তিনদিনে তিনটি পরীক্ষা নেয়া হবে। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র থাকবে। শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধামতো পরীক্ষাকেন্দ্র পছন্দ করতে পারবেন।
এর আগে গত ১ ডিসেম্বর দেশের ১৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের সুবিধার কথা বিবেচনায় কেন্দ্রীয়ভাবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়-
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্বদ্যিালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্বদ্যিালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
উল্লেখ্য যে, এ বছর ২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার কথা জানায়। পরে ফেব্রুয়ারিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে। তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এতে রাজি হয়নি। সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পর ১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও উপাচার্যদের এক সভায় এবার আরও ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা হবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আরো পড়ুন,
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতিতে এডমিশন শিওর সাকসেস প্রোগ্রাম
আপনার মতামত দিন