‘ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কোনো শিক্ষক কোচিং করাতে পারবেন না। আর অভিযুক্ত শিক্ষককে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিতের শিক্ষক মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ভয়াবহ যৌন হয়রানির অভিযোগ দিচ্ছেন ছাত্রীরা। ক্লাসে স্বাভাবিক থাকলেও কোচিং সেন্টারে ভয়ংকর হয়ে উঠতেন অভিযুক্ত শিক্ষক। নিজ কোচিং সেন্টারে একাধিক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠা শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে বহিষ্কারের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছে রাজধানী আজিমপুরের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে এ ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিষ্ঠানটি। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সেখানে ১৭৭ জন ছাত্রীর কাছে এ শিক্ষক সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সেখানে ছাত্রীরা জানান তার অপকর্মের উৎস প্রাইভেট কোচিং সেন্টার। প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে ক্লাসে পর্ণ ভিডিও প্রদর্শন, কোলে বসিয়ে খাওয়ানো ও স্পর্শকাতর জায়গায় টাচ করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ দিয়েছেন ছাত্রীরা। তবে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলের ক্লাসে আচরণগত কোনো সমস্যা না পেলেও কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের স্বজনপ্রীতি করতেন বলে অভিযোগ করেছেন।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ছাত্রীরা যে অভিযোগ করেছেন
৭ম শ্রেণি, ৮ম শ্রেণি, ৯ম শ্রেণি, ১০ম শ্রেণি ও একাদশ শ্রেণির মোট ১৭৭ জন ছাত্রীর মতামত গ্রহণ করা হয়। মতামত প্রদানের জন্য প্রত্যেক ছাত্রীকে ৫ টি প্রশ্ন সম্বলিত একটি প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়। সেখানে ১৭ জন ছাত্রী অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেন।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। শুধু অভিযোগগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে।
এক ছাত্রী বলেন “কখনও কোন খারাপ আভাস পাইনি, তবে অনেককে তার ব্যবহারে সমস্যা আছে বলে শুনেছি, স্যারের কোচিং এ এক জুনিয়রের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ ঘটেছে, মেয়েটির নাম (অপ্রকাশিত) , এবার (অপ্রকাশিত) এ পড়ছে
আরেক ছাত্রী বলেন ‘মজা করতে করতে পাঠদান করেন। কিন্তু তার প্রাইভেটে পড়াকালীন তিনি আমার দুইজন বন্ধুর সাথে এবং আমার একজন জুনিয়র ( নাম অপ্রকাশিত) সাথে বাজে অঙ্গভঙ্গি করেছেন। প্রাইভেট পড়ার সময় হাতে, হাঁটুতে, গালে সহ তিনি আমাদের চুলে হাত দিতেন। মাঝে মাঝে আমাদের খাতার মধ্যে ভালোবাসিসহ অনেক ধরনের কথা লিখতেন। তাছাড়া তিনি ( অপ্রকাশিত ছাত্রীর নাম) শরীরের বাজে বাজে জায়গায় স্পর্শসহ অশ্লীল আচরণ করতেন। তিনি স্কুলে এতো না করলেও প্রাইভেট পড়ানোর সময় স্পর্শ করতেন”।
আরেক ছাত্রী বলেন “ স্যার কখনো আমার সাথে কোন অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করেননি । তবে আমাদের জুনিয়র কিছু কমপ্লাইন করেছে। তাদের মতে স্যার অনেক ‘Touchy’ ব্যবহার করে এবং আমার আপন ছোট বোন ও একই কথা বলেছিল আমাকে” ।
আরেক ছাত্রী বলেন “আমি বিভ্রান্ত, আমার এক বান্ধবীকে একজন জুনিয়র বলেছে স্যার ওকে অশ্লীলভাবে কিছু বলেছে, আমি এরকমটি শুনেছিলাম”।
আরেক ছাত্রী “আমি কখনো স্যারের কাছে কোচিং করিনি। ৫ম শ্রেণিতে থাকতে ১০ম শ্রেণির আপুদের কাছ থেকে স্যারের নামে অভিযোগ শুনেছিলাম। বেশ কয়েকটি আপু নাকি স্যারের কাছ থেকে ব্যাড টাচের স্বীকার হয়”।
আরেক ছাত্রী বলেন “স্যার ভালো মানুষ বলেই আমি মনে করি। কিন্তু তিনি খুবই পক্ষপাতিত্ব করেন। তিনি তার পূর্ব পরিচিত ছাত্রীদের অনেক স্পেশাল মনে করেন। তিনি সবসময় তাদেরই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর প্রিয় ছাত্রীদের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে যান মাঝে মাঝে তিনি তার প্রিয় ছাত্রীদের স্পর্শও করে থাকেন”।
আরেক ছাত্রী বলেন “স্যার পড়া বুঝায় ভালো, স্যারের আচরণ বেশি ভালো না”। আরেক ছাত্রী বলেন “স্যার পড়ায় ভালো কিন্তু স্যারের অঙ্গভঙ্গি ভালোনা”।
আরেক ছাত্রী বলেন “স্যার গণিত ভালো বোঝান, ভালো মানুষ। অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করেছেন বলা যায়, স্যার কোচিং এ আমাদেরকে মজা করে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছেন, তারপর হেসে বলেছেন যে না মজা করছিলাম”। আরেক ছাত্রী বলেন “স্যার পড়া মোটামুটি ভালো বুঝালেও তার আচার-আচরণ আমার কাছে ভালো লাগেনি ” ।
এক তরুণীর মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় মুরাদ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আপনার মতামত দিন